১৮৮২। ইয়াহইয়া ইবনু বুকায়র (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত , ১৮৮২। ইয়াহইয়া ইবনু বুকায়র (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত , তিনি বলেন , আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম - কে রমযান সম্পর্কে বলতে শুনেছি , যে ব্যাক্তি ঈমানের সাথে সাওয়াব লাভের আশায় কিয়ামে রমযান অর্থ্যাৎ তারাবীহর সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করবে তার পূর্ববর্তী গোনাহসমূহ মাফ করে দেয়া হবে।
১৮৮৩। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে , রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন , যে ব্যাক্তি ঈমানের সাথে সাওয়াব লাভের আশায় তারাবীহর সালাত (নামায/নামাজ) দাঁড়াবে তার পূর্ববর্তী গোনাহসমূহ মাফ করে দেওয়া হবে। হাদীসের রাবী ইবনু শিহাব (রহঃ) বলেন , রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তেকাল করেন এবং তারাবীহর ব্যাপারটি এ ভাবেই চালু ছিল। এমনকি আবূ বাকর (রাঃ) -এর খিলাফতকালে ও ‘উমর (রাঃ) -এর খিলাফতের প্রথম ভাগে এরূপই ছিল। ইবনু শিহাব (রহঃ)‘উরওয়া ইবনু যুবায়র (রহঃ) সূত্রে ‘আব্দুর রাহমান ইবনু ‘আবদ আল -ক্বারী (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন , তিনি বলেন , আমি রমযানের এক রাতে ‘উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) -এর সঙ্গে মসজিদে নববীতে গিয়ে দেখতে পাই যে , লোকেরা বিক্ষিপ্ত জামায়াতে বিভক্ত। কেউ একাকী সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করছে আবার কোন ব্যাক্তি সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করছে এবং তার ইকতেদা করে একদল লোক সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করছে। ‘উমর (রাঃ) বললেন , আমি মনে করি যে , এই লোকদের যদি আমি একজন ক্বারীর (ইমামের )পিছনে একত্রিত করে দই , তবে তা উত্তম হবে। এরপর তিনি উবাই ইবনু কা‘ব (রাঃ) -এর পিছনে সকলকে একত্রিত করে দিলেন। পরে আর এক রাতে আমি তাঁর [‘উমর (রাঃ) ] সঙ্গে বের হই। তখন লোকেরা তাদের ইমামের সাথে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করছিল। ‘উমর (রাঃ) বললেন , কত না সুন্দর এই নতুন ব্যবস্থা! তোমরা রাতের যে অংশে ঘুমিয়ে থাক তা রাতের ঐ অংশ অপেক্ষা উত্তম যে অংশে তোমরা সালাত (নামায/নামাজ) আদায় কর, এর দ্বারা তিনি শেষ রাত বুষিয়েছেন , কেননা তখন রাতের প্রথমভাগে লোকেরা সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করত।
১৮৮৪। ইসমাঈল (রহঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -সহধর্মিণী ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে , রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেন এবং তা ছিল রমযানে।
১৮৮৫। ইয়াহইয়া ইবনু বুকায়র (রহঃ) ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত , তিনি বলেন , রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গভীর রাতে বের হয়ে মসজিদে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেন, কিছু সংখ্যক পুরুষ তাঁর পিছনে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেন। সকালে লোকেরা এ সম্পর্কে আলোচনা করেন, ফলে লোকেরা অধিক সংখ্যায় সমবেত হন। তিনি সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেন এবং লোকেরা তাঁর সঙ্গে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেন। সকালে তাঁরা এ বিষয়ে আলাপ -আলেঅচনা করেন। তৃতীয় রাতে মসজিদে মুসল্লীর সংখ্যা আরো বেড়ে যায়। এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেন ও লোকেরা তাঁর সঙ্গে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেন। চতুর্থ রাতে মসজিদে মুসল্লীর সংকুলান হলনা। কিন্তু তিনি রাতে আর বের না হয়ে ফজরের সালাতে (নামাযে) বেরিয়ে আসলেন এবং সালাত (নামায/নামাজ) শেষে লোকদের দিকে ফিরে প্রথমে তাওহীদ ও রিনসালতের সাক্ষ্য দেওয়ার পর বললেনঃ শোন! তোমাদের (গতরাতের) অবস্থান আমার অজানাছিল না , কিন্তু আমি এই সালাত (নামায/নামাজ) তোমাদের উপর ফরয হয়ে যাবার আশংকা করছি (বিধায় বের হই নাই)। কেননা তোমরা তা আদায় করায় অপারগ হয়ে পড়তে। রাসূলল্লাহ -এর ওফাত হল আর ব্যাপারটি এভাবেই থেকে যায়।
১৮৮৬। ইসমা‘ঈল (রহঃ) আবূ সালামা ইবনু ‘আব্দুর রাহমান (রহঃ) থেকে বর্ণিত , তিনি ‘আায়িশা (রাঃ) -কে জিজ্ঞাসা করেন যে , রমযানে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সালাত (নামায/নামাজ) কিরূপ ছিল? তিনি বললেন , রমযান মাসে ও রমযান ছাড়া অন্য সময়ে (রাতে)তিনি এগারো রাক‘আত হতে বৃদ্ধি করতেন না। তিনি চার রাকআত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন , সে চার রাকআতের সৌন্দর্য ও দৈর্ঘ্য ছিল প্রশ্নাতীত। এরপর চার রাক‘আত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন , সে চার রাকআতের সৌন্দর্য ও দৈর্ঘ্য ছিল প্রশ্নাতীত। এরপর তিন রাকআত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন। আমি [‘আয়িশা (রাঃ)] বললাম, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আপনি বিতর আদায়ের আগে ঘুমিয়ে যাবেন? তিনি বললেন : হে ‘আয়িশা! আমার দুচোখ ঘুমায় বটে কিন্তু আমার কালব নিদ্রাভিভূত হয় না।
১৮৮৭। ‘আলী ইবনু ‘ আবদুল্লাহ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত , নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যে ব্যাক্তি রমযানে ঈমানের সাথে ও সাওয়াব লাভের আশায় সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করে , তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ মাফ করে দেওয়া হয় এবং যে ব্যাক্তি ঈমানের সাথে , সাওয়াব লাভের আশায় লাইলাতুল কদরে রাত জেগে দাঁড়িয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে , তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ মাফ করে দেওয়া হয়। সুলায়মান ইবনু কাসীর (রহঃ) যুহরী (রহঃ) থেকে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
১৮৮৮। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কতিপয় সাহাবীকে স্বপ্নযোগে রমযানের শেষের সাত রাতে লাইলাতুল কদর দেখানো হয়। (এ কথা শুনে) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : আমাকেও তোমাদের স্বপ্নের অনুরূপ দেখানো হয়েছে। (তোমাদের দেখা ও আমার দেখা)শেষ সাত দিনের ক্ষেত্রে মিলে গেছে। অতএব যে ব্যাক্তি এর সন্ধান প্রত্যাশী , সে যেন শেষ সাত রাতে সন্ধান করে।
১৮৮৯। মু‘য়ায ইবনু ফাযালা (রহঃ) আবূ সা‘ঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত , তিনি বলেন , আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে রমযানের মধ্যক দশকে ইতিকাফ করি। তিনি বিশ তারিখের সকালে বের হয়ে আমাদেরকে সম্বোধন করে বললেন : আমাকে লাইলাতুল কদর (-এর সঠিক তারিখ) দেখানো হয়েছিল পরে আমাকে তা ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে। তোমরা শেষ দশকের বেজোড় রাতে তার সন্ধান কর। আমি দেখতে পেয়েছি যে, আমি (ঐ রাতে)কাদা - পানিতে সিজদা করছি। অতএব যে ব্যাক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে ইতিকাফ করেছে সে যেন ফিরে আসে (মসজিদ হতে বের হয়ে না যায়)। আমরা সকালে ফিরে আসলাম (থেকে গেলাম )। আমরা আকাশে হালকা মেঘ খন্ডও দেখতে পাই নাই। পরে মেঘ দেখা দিল ও এমর জোরে বৃষ্টি হল যে, খেজুরের শাখায় তৈরি মসজিদের ছাদ দিয়ে পানি ঝরতে লাগল। সালাত (নামায/নামাজ) শুরু করা হলে আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে কাদা- পানিতে সিজদা করতে দেখলাম। পরে তাঁর কপালে আমি কাঁধার চিহ্ন দেখতে পাই।
১৮৯০। কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত , রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : তোমরা রমযানের শেষ দশকের বেজোড় রাতে লাইলাতুল কদরের সন্ধান কর।
১৮৯১। ইবরাহীম ইবনু হামযা (রাঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত , তিনি বলেন , রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযান মাসের মাঝের দশকে ইতিকাফ করেন। বিশ তারিখ অতীত হওয়ার সন্ধ্যায় এবং একুশ তারিখের শুরুতে তিনি এবং তাঁর সংগে যাঁরা ইতিকাফ করেছিলেন সকলেই নিজ নিজ বাড়ীতে প্রস্থান করেন। এর্ব তিনি যে মাসে ইতিকাফ করেন ঐ মাসের যে রাতে ফিরে যান সে রাতে লোকদের সামনে ভাষণ দেন। আর তাতে মাশাআল্লাহ , তাদেরকে বহু নির্দেশ দান করেন, তারপর বলেন যে , আমি এই দশকে ইতিকাফ করেছিলাম। এরপর আমি সিদ্ধান্ত করেছি যে , শেষ দশকে ইতিকাফ করব। যে আমার সঙ্গে ইতিকাফ করেছিল সে যেন তার ইতিকাফস্থলে থেকে যায়। আমাকে সে রাত দেখানো হয়েছিল , পরে তা ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : শেষ দশকে ঐ রাতের তালাশ কর এবং প্রত্যেক বেজোড় রাতে তা তালাশ কর। আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, মসজিদে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সালাত (নামায/নামাজ)-এর স্থানেও বৃষ্টির পানি পড়তে থাকে। এটা ছিল একুশ তারিখের রাত। যখন তিনি ফযরের সালাত (নামায/নামাজ) শেষে ফিরে বসেন তখন আমি তাঁর দিয়ে তাকিয়ে দেখতে পাই যে, তাঁর মুখমন্ডল কাদা-পানি মাখা।
১৮৯২। মুহাম্মদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত , নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে , তোমরা (লাইলাতুল কদর) তালাশ কর।
১৮৯৩। মুহাম্মদ (রহঃ) ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত , তিনি বলেন , রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযানের শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন এবং বলতেন : তোমরা শেষ দশকে লাইলাতুল কদর তালাশ কর।
১৮৯৪। মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে , নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : তোমরা তা (লাইলাতুল কদর) রমযানের শেষ দশকে তালাশ কর। লাইলাতুল কদর (শেষ দিক হতে গনণায়) নবম, সপ্তম বা পঞ্চম রাত অবশিষ্ট থাকে।
১৮৯৫। ‘আবদুল্লাহ ইবনু আবূল আসওয়াদ (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত , তিনি বলেন , রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : তা শেষ দশকে , তা অতিবাহিত নবম রাতে অথবা অবশিষ্ট সপ্তম রাতে অর্থাৎ লাইলাতুল কদর। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে অন্য সূত্রে বর্ণিত যে , তোমরা ২৪ তম রাতে তালাশ কর।
১৮৯৬। মুহাম্মদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) ‘উবাদা ইবনুুস সামিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত , তিনি বলেন , একবার নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে লাইলাতুল কদরের (নির্দিষ্ট তারিখের) অবহিত করার জন্য বের হয়েছিলেন। তখন দুজন মুসলমান ঝগড়া করছিল। তা দেখে তিনি বললেন : আমি তোমাদেরকে লাইলাতুল কদরের সংবাদ দিবার জন্য বের হয়েছিলাম , তখন অমুক অমুক ঝগড়া করছিল , ফলে তার(নির্দিষ্ট তারিখের) পরিচয় হারিয়ে যায়। সম্ভবত : এর মধ্যে তোমাদের জন্য কল্যান নিহিত রয়েছে। তোমরা নবম , সপ্তম ও পঞ্চম রাতে তা তালাশ কর।
tags:-তারাবির নামাজ ২০ রাকাত,তারাবির নামাজ ৮ রাকাত